হাজতী আসামী পক্ষে জামিনের প্রার্থনা

Post- 150

মাননীয়,

দায়রা  জজ  আদালত,  ফেনী

জেলা- ফেনী।

ফৌজদারী বিবিধ মামলা নং-      / ২০২১ইং

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন কিরন, পিতা-শাহ জামাল, সাং-পূর্ব বিজয় সিং, থানা- ফেনী সদর, জেলা-ফেনী ।

………………… প্রার্থী/আসামী।

          বনাম

           রাষ্ট্র

………………… প্রতিপক্ষ/বাদী ।

উদ্ভূতঃ ফেনী মডেল থানার মামলা নং-৩৮, তারিখ- ২০/১০/২০২১ ইং,  ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারা । যাহা ফেনীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর আমলী আদালতে এর জি.আর মামলা নং- ৬০০/২০২১ইং মামলায়  বিগত ২৪/১০/২০২১ইং তারিখের বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে আসামী/প্রার্থীপক্ষে দাখিলী জামিনের প্রার্থনা না-মঞ্জুরের প্রেক্ষিতে আনীত আসামী / প্রার্থী পক্ষে জামিনের দরখাস্ত।

বিষয়ঃ  হাজতী আসামী পক্ষে জামিনের প্রার্থনাঃ

নিবেদন এই,                                                 

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই, এজাহারকারী বিবি মমতাজ প্রকাশ মরিয়ম বিগত ১৭/১০/২০২১ইং, বিকাল ৩.০০ ঘটিকার সময় সংঘটিত ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিগত ২০/১০/২০২১ ইং  তারিখ ২০.৩৫ ঘটিকার সময় থানায় এই মর্মে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করেন যে- ১নং আসামী তাহার স্বামী, ২নং ও ৩নং আসামী তাহার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ী হয়।  এজহারকারীর  সহিত ১নং আসামী/প্রার্থীর বিগত ২৬/১১/২০২০ইং তারিখে ইসলামী শরিয়ত ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিবাহের সময় বাদিনীর পিতা-মাতা আত্নীয় স্বজনগণ বাদিনীর সুখ শান্তির কথা চিন্তা করিয়া স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। বিবাহের পর তাহাদের দাম্পত্য জীবন সুখকর হয় নাই। বিগত ৩০/০৭/২০২১ইং তারিখ আসামীগণ যৌতুকের দাবীতে বাদিনীকে মারধর করিয়া হত্যা চেস্টা করিলে বাদিনী অনন্যপায় হইয়া জীবন রক্ষার্থে  মোবাইল নিয়া বাথরুমে গিয়া বিষয়টি ১নং সাক্ষীকে অবহিত করিলে বাদীর পিতা ফেনী মডেল থানায় একখানা দরখাস্ত আনায়ন করিয়া বাদীনিকে আসামীদের কবল হইতে উদ্ধার করে। অতঃপর বাদিনী ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাদিনী ও ১নং আসামী উভয় পক্ষের আত্নীয় স্বজনের মধ্যস্থতায় যৌতুকের দাবীতে মারধর করিবেনা বলিয়া প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়া আসামীর বাসায় নিয়া গেলেও আসামীগণ ঘটনার তারিখ বিকাল অনুমান ৩.০০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে সকল আসামীগণ পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্রমে আসামীদের ইলেকট্রিক দোকানের পুজির কথা বলিয়া বাদিনীর নিকট ৫,০০,০০০/- টাকা যৌতুক দাবী করে। বাদিনী তাহার পিতার যৌতুক প্রদানে অক্ষমতার কথা বলিলে আসামীগণ ক্ষিপ্ত হইয়া বাদিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১নং আসামী বুকে পিঠে কিল ঘুষি মারে, ২নং আসামী বাদিনীর বুকে ঘুষি মারে এবং ৩নং আসামী ছড় মারিয়া জখম করে। বাদিনী বিষয়টি মোবাইল ফোন বাদিনীর পিতাকে অবহিত করিলে ঘটনার তারিখ বিকাল ৫.০০ ঘটিকার সময় বাদিনীর পিতা সাক্ষীদের নিয়া আসামীদের ভাড়া বাসায় গেলে আসামী পুনরায় সাক্ষীদের সম্মুখে বাদিনীর নিকট ৫,০০,০০০/- টাকা যৌতুক দাবী করে এবং ধমক দিয়া বলে যে, দাবীকৃত যৌতুকের টাকা ছাড়া বাদিনীকে রাখবেনা এবং এ বিষয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা করিলে বাদিনীকে হত্যা করে লাশ গুম করিয়া  ফেলিবে। বিগত ২০/১০/২০২১ ইং তারিখে ফেনী মডেল থানায় এজাহার খানা দায়ের করিবার পর বিগত ২১/১০/২০২১ ইং তারিখ পুলিশ ১নং আসামীকে ধৃত করিয়া  বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে চালান করে। উক্ত এজাহারের ভিত্তিতে থানায় মামলাটি রুজু হইবার পর বর্তমানেও তদন্তাধীন রহিয়াছে। প্রার্থী ১নং আসামীর জন্য বিগত ২৪/১০/২০২১ইং তারিখে বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে জামিনের প্রার্থনা করিলে বিজ্ঞ নিম্ন আদালত আসামীর জামিনের প্রার্থনা না-মঞ্জুর করেন। প্রার্থী আসামী উক্ত আদেশে সংক্ষুব্ধ হইয়া নিম্ন লিখিত হেতুবাদসহ অপরাপর হেতুতে অত্র ফৌজদারী বিবিধ মামলা আনায়ন করিতেছে।                          

হেতুবাদ সমূহঃ

১। প্রার্থী আসামী সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তি হয়। আসামী ফেনী শহরের ইসলামপুর রোড়স্থ্ একজন ইলেকট্রনিক্স্‌ ব্যবসায়ী। আসামী এবং অত্র মামলার এজহারকারিনী পরস্পর স্বামী-স্ত্রী হয়। এজহারে কথিত ঘটনা সম্পূর্ণ কল্পিত ও বানোয়াট বটে। এজাহারকারী শুধুমাত্র আসামীকে হয়রানী করার জন্য অত্র মামলায় জড়িত করিয়াছে। তাই আসামী জামিন পাইতে পারে।

২। যেহেতু, উপরোক্ত আসামীকে বিগত ২১/১০/২০২১ইং তারিখে গ্রেফতার করিয়া জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। অত্র আসামী বিগত ২১/১০/২০২১ইং তারিখ হইতে অদ্যাবধি  জেল হাজতে মানবেতর জীবনযাপন করিতেছে। জেল হাজতে থাকায় তাহার শরীরে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হইয়াছে এবং বিভিন্ন রোগের লক্ষন দেখা যাইতেছে। এছাড়া আসামীর সাইনোসাইটিস সমস্যা থাকায় তাহার চিকিৎসার প্রয়োজন।

৩। যেহেতু, অত্র মামলার আসামীর সহিত বাদীর ইসলামী শরিয়া ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী গত ২৬/১১/২০২০ইং সনে দেনমোহর ৭,০০,০০০/- (সাত লক্ষ) যাহার মধ্যে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা উসুল ধার্যে বিবাহ হয় এবং বৈবাহিক সম্পর্ক যথারীতি স্বাভাবিকভাবে চলিতে ছিল। বিগত ৩০/০৭/২০২১ইং তারিখে আসামীর সহিত এজহারকারী/বাদী পিত্রালয়ে বেড়াতে যায় এবং আসামী বাদীকে তাহার পিত্রালয়ে রাখিয়া আসামী তাহার কর্মস্থলে চলিয়া আসে। পরবর্তীতে বাদিনীকে স্বামীর বাড়িতে আসিতে বলিলে বাদিনী রাগ করিয়া আসামীর সহিত কথা বলা বন্ধ করিয়া দেয় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করিয়া রাখে। বারংবার স্বামীগৃহে আনিবার চেস্টা করা শর্তেও বাদিনী স্বামীগৃহে আসে নাই।  কিন্তু এজহারে ঘটনার তারিখ দেখানো হয় ১৭/১০/২০২১ইং তারিখে, যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সেই সময়ে বাদিনী তাহার পিত্রালয়ে ছিল সুতরাং বাদিনীর মামলার ঘটনা সম্পূর্ণ কল্পিত। তাই আসামী জামিন পাইতে পারে।

৪। যেহেতু, বাদিনী পিত্রালয়ে যাইবার পরে বাদিনী আসামী ও তার পরিবার নিয়া বিভিন্ন অভিযোগ করিতে থাকে ফলে দুই পরিবারের মাঝে মনমালিন্য তৈরী হয়। বাসায় ফিরাইয়া আনার জন্য আসামী কয়েকবার বাদিনীর পিত্রালয়ে গমন করিলে আসামী সহিত বাদিনীর ও তার মা দুঃব্যবহার করে।  পরবর্তিতে শুধুমাত্র ক্ষোভের বসে বাদিনী অত্র মামলা আনায়ন করিয়াছে। তাই আসামী জামিন পাইতে পারে।

৫। যেহেতু, আসামী তাহার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হন। তাহার অবর্তমান তাহার পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিনানিপাত করিতেছে। তাই আসামী জামিন পাইতে পারে।

৬। অধিকন্তু, আসামী/প্রার্থী এজাহারকারীর সহিত আপোষেও আগ্রহী রহিয়াছে।

৭। যেহেতু, আসামী বাংলাদেশের আইনমান্যকারী স্থায়ী নাগরীক, আসামী জামিনে মুক্তি পাইলে সে পালায়ন করিবেনা। উপযুক্ত জামিনদার প্রদান করিবে এবং ধার্য্য তারিখে হাজির থাকিবে।

৮। বক্রী শুনানীকালে বাচনিক নিবেদন করা হইবে।

     অতএব, মাননীয় আদালত দয়া বিতরণে অত্র দরখাস্ত গ্রহণ করতঃ নিম্ন আদালতের নথি তলবে আনিয়া প্রতিপক্ষের প্রতি নোটিশ জারীক্রমে উভয়পক্ষের শুনানী গ্রহণ অন্তে উপরিউক্ত অবস্থা ও করণাধীনে মামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামী/প্রার্থীকে জামিনে মুক্তির আদেশ দানে এবং অত্র দরখাস্ত শুনানী সাপেক্ষে অত্রসঙ্গে দাখিলী আসামী/প্রার্থীপক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের প্রার্থনা মঞ্জুর করিতে বিজ্ঞ আদালতের মর্জি হয়। 

ইতি তাং-  ২৭/১০/২০২১

©All copyright reserved by Law Academy BD .