153

Post-155

মাননীয়,

জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী ।

জেলা-ফেনী।

             সূত্রঃ ফৌজদারী আপীল নং      /২০২১ ইং।

        উদ্ভূত ফেনী মডেল থানার মামলা  নং- ৬৫(০২)১৭ ইং ।

        জি.আর মামলা নং-১৩৬/২০১৭ইং

      বিষয়ঃ ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০৮ ধারা মতে আপীল আবেদন।

সূত্রঃ বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত, ফেনী কর্তৃক জি.আর মামলা নং ১৩৬/২০১৭ ইং এর বিগত ০৩/০২/২০২১ ইং তারিখে তর্কিত রায় আদেশে আসামী / আপীল্যান্টকে দোষী সাব্যস্থ করিয়া ১৯৯০ইং সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর টেবিল ৭(ক) ধারায় ১ বছর ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ২,০০০/- (দুই হাজার) টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ০১ (এক) মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের যে  তর্কিত রায় ও আদেশ প্রদান করিয়াছেন তাহার অসন্তুষ্টিতে অত্র আপীলের আবেদন।

মোঃ কিবরিয়া

পিতা- মোঃ আব্দুল সিকদার, সাং-করিম উদ্দিন মাদবর কান্দি, (আব্দুল সিকদারের বাড়ী), পোঃ- সেনেরচর, থানা- জাজিরা, জেলা- শরিয়তপুর ।

                            ………আপীল্যান্ট/ আসামী।

–বনাম–

   রাষ্ট্র

                         …………রেসপনডেন্ট/ বাদী।

নিবেদন এই যে, 

প্রসিকিউশনপক্ষের মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, জেলা গোয়েন্দা শাখার জিডি নং -৩২৭, তারিখ ২৫/০২/১৭ ইং মূলে এজহারকারী তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ থানা এলাকায় গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার ডিউটি করা কালে ফেনী মদেল থানাধীন স্টার লাইন পেট্রোল পাম্পের উত্তর পার্শ্বে আবদুল মালেক এর দোকানের সামনে ফেনী বাইপাস পাকা রাস্তার উপর ২৩.১০ ঘটিকায় অবস্থান করে বিভিন্ন যানবাহনে চেক করতে থাকেন। অনুমান ০০.০৫ ঘটিকায় কুমিল্লার দিক থেকে আগত ফেনী গামী যাতীবাহী মদিনা পরিবহণ বাস ঢাকা-মেট্রো-জ-০৪-০৭৩৭ গাড়ীকে সংকেত দিয়ে থামিয়ে চেক করাকালে বাসের মাঝামাঝি সারির বাম পাশের আসনে বসা অবস্থায় আসামী মোঃ ইলিয়াছ এর উরুর

উপর হাত দিতে ধরা অবস্থায় একটি বাজারের ব্যাগের ভেতরে স্কচটেপ দিয়ে বিশেষভাবে মোড়ানো ০২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন। উপস্থিত সাক্ষীদের মোকাবেলায় ০০.২৫ ঘটিকায় এস.আই মোঃ মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করায় হয়। জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। অতঃপর উদ্ধারকৃত গাঁজা ও ধৃত আসামীকে থানায় নিয়ে এসে আসামীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় এজহার দায়ের করেন। উপযুক্ত বিষয়ে এজহার দাখিলের পর ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ FIR ফরম পূরণ করে ফেনী মডেল থানার মামলা নং ৬৫, তারিখ ২৬/০২/২০১৭ইং ধারা ১৯৯০ সনের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর টেবিল ৭(ক) রুজু করে মামলার তদন্তভার এস.আই মিন্টু দত্ত এর উপর অর্পণ করেন। দতন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তভার গ্রহণ করে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, পৃথক কাগজে ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র অংকন করেন ও সূচীপত্র প্রস্তুত করেন। এজহারকারী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের জবানবন্দি The Code of Criminal Procedure, 1898 ধারা মতে লিপিবদ্ধ করেন। আসামীর নাম ঠিকানা যাচাই করেন । জব্দকৃত আলামত (গাঁজা) আদালতের অনুমতিক্রমে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট প্রাপ্ত হয়ে পর্যালোচনা করেন। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায় যে, প্রেরিত নমুনা আলামত পরীক্ষান্তে রাসায়নিক পরীক্ষক কাগজের প্যাকেটে রক্ষিত শুল্ক গুল্ম “গাঁজা” বলে মতামত প্রদান করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে ও সাক্ষ্য প্রমাণে আসামী মোঃ ইলিয়াস এর বিরুদ্ধে ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র আনের ১৯(১) এর টেবিল ৭(ক) ধারার অপরাধ সত্য বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতিয়মান হওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে বিচারের নিমিত্তে ফেনী মডেল থানায় অভিযোগপত্র নং ১৮৩, তারিখ ২৮/০৩/২০২১ইং ধারাঃ ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর টেবিল ৭(ক) ধারায় বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। 

বিগত ২২/১১/২০১৭ খ্রিঃ তারিখ আসামী মোঃ ইলিয়াছ এর বিরুদ্ধে ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৭(ক) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয় । আসামী পলাতক থাকায় গঠিত অভিযোগ আসামীকে পাঠ করে শুনানো ও ব্যাখ্যা করে বুঝানো সম্ভব হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রসিকিউশনপক্ষে ০৭ (সাত) জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করেন। আসামী পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা করা হয়নি। অতঃপর সাক্ষ্যপর্ব সমাপ্তির পর আসামী পলাতক থাকায় তাকে The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞ আদালত বাদী/সংবাদদাতার উপস্থাপনকৃত সাক্ষীগণের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করিয়া বিগত ০৩/০২/২০২১ ইং তারিখে তর্কিত রায় আদেশে আসামী / আপীল্যান্টকে দোষী সাব্যস্থ করিয়া ১৯৯০ইং সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর টেবিল ৭(ক) ধারায় ১ বছর ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ২,০০০/- (দুই হাজার) টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ০১ (এক) মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে যে  তর্কিত রায় ও আদেশ প্রদান করিয়াছেন তাহার অসন্তুষ্টিতে অত্র আপীলের আবেদন।

হেতু সমূহঃ

১। যেহেতু বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের তর্কিত রায় আদেশ মনগড়া ও ভিত্তিহীন ও বাস্তব অবস্থা ও সাক্ষী সাবুদের পরিপন্থী এবং বেআইনী সেহেতু অত্র আপীল্যান্টকে দন্ড দান করায় ক্ষতিগ্রস্থ্ হইয়াছেন বিধায় তর্কিত রায় আদেশ রদ রহিতযোগ্য । 

২। বিজ্ঞ নিম্ন আদালত ঘটনার পারিপাশ্বিকতা, সাক্ষ্য প্রমাণ এবং আইনগত বিষয়গুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করেন নাই বিধায় প্রদত্ত দন্ডাদেশ বাতিল ও রদ রহিতযোগ্য ।

৩। রেসপন্ডেন্ট/বাদী আরজির সহিত সাক্ষীগণের বক্তব্য অসামাঞ্জস্যপূর্ণ যে কারণে বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের বিগত ০৩/০২/২০২১ ইং তারিখে তর্কিত রায় আদেশ রদ-রহিত ও বাতিলযোগ্য।

৪। PW-3 মোঃ জসিম উদ্দিন তার জবানবন্দীতে বলেন, আসামী ডকে নেই। থাকলে চিনতেন। গত ২৬/০৭/১৭খ্রিঃ তারিখ রাত ০৯.৩০-১০ঃ৪০ ঘটিকায় ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সময় ফতেহপুর ষ্টার লাইন পেট্টোল পাম্পের সামনে সিগনাল দিয়ে মদিনা বাসটি থামায় । তিনি ঐ বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। বাসের নাম্বার ৭৩৭ ছিল। পুলিশ গাড়ীতে উঠে তল্লাশী করে। গাড়ীর সীটের বাম পাশের সীটে বসা আসামী ইলিয়াছকে ব্যাগসহ নামায়। তারপর পুলিশ তাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। তিনি কাগজে স্বাক্ষর করেন।তাহার এই জবানবন্দির অপরাপর সাক্ষী PW-1, PW-2, PW-4, PW-5, PW-6 এর জবানবন্দী সাথে ঘটনার তারিখ ও সময়ের যথেষ্ট গরমিল পরিলক্ষিত হয়েছে বিধায় তাহাদের উক্ত জবানবন্দী সাংঘষিক যাহা রদ-রহিত ও বাতিলযোগ্য। 

৫। বলাবাহুল্য যে, আপীল্যান্ট  পক্ষ  উক্ত মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দীর পর  জেরা করিতে না পারায় মামলার মূল বিষয় উদঘাটন করা সম্ভবপর হয় নাই। উক্ত PW-3 এবং  PW-7 কে যথাযথভাবে জেরা করিলে আপীল্যান্ট পক্ষ উক্ত মামলা হইতে খালাস পাইতো বিধায় বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের আদেশ রহিত ও বাতিলযোগ্য।

৬। যেহেতু অত্র মামলার এজহারের সাক্ষীদের জবানবন্দী পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করিলে কথিত ঘটনার সময় স্থান, ঘটনার প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রহিয়াছে। সেহেতু শাস্তি প্রদানের তর্কিত রায় আদেশ সরাসরি খারিজযোগ্য।

৭। অপরাপর বিষয়াদি উক্ত মামলার শুনানীকালে বাচনিকভাবে পেশ করা হইবে। 

অতএব বিনীত প্রার্থনা এই যে, সুবিজ্ঞ আদালত দয়াপরবশ হইয়া অত্র আপীলখানা গ্রহণ করতঃ নিম্ন আদালতের নথী তলব পূর্বক উভয়পক্ষকে নোটিশ জারীক্রমে শুনানীঅন্তে আপীল মঞ্জুর করতঃ বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের বিগত ০৩/০২/২০২১ ইংরেজী তারিখে তর্কিত রায় আদেশ খারিজ মর্মে আসামীকে বেখসুর খালাস প্রদানের এবং আসামীকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দানের এবং আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জরিমানার টাকা আদায় স্থগিত রাখার এবং অন্যান্য যে সমস্ত প্রতিকারাদি আপীল্যান্ট পক্ষ প্রাপ্য হন তাহা প্রদানের বিহীত আদেশ দানে মর্জি হয়। ইতি, তাং-২৬/১০/২০২১